ডিভি লটারি কি?
ডিভি বলতে ডাইভার্সিটির সংক্ষিপ্ত রূপ বোঝায়। আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈধভাবে আমেরিকায় যাওয়ার এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ডিভি লটারি ভিসা চালু করেছে। এই লটারির মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো দেশের মানুষ আমেরিকায় স্থায়ীভাবে নাগরিকত্ব বা বসবাসের সুযোগ পান।
বৈধভাবে যারা আমেরিকা যেতে চান তাদের জন্য আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৮৫ ধরনের ভিসার ব্যবস্থা করেছে। ডিভি লটারি এসব ভিসার মধ্যে একটি, যা মানুষের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সমাদৃত। ডিভি ভিসার মাধ্যমে প্রতি বছর আমেরিকা বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫৫,০০০ জনকে লটারির মাধ্যমে স্থায়ী নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেয়। মূলত পৃথিবীর সব দেশের মানুষকে আমেরিকায় থাকার সুযোগ করে দিতে আমেরিকার সরকার এই ভিসা চালু করেছে। তবে যেসব দেশের অভিবাসীর সংখ্যা আমেরিকাতে তুলনামূলক কম, শুধুমাত্র সেই দেশগুলোর মানুষ ডিভি লটারির জন্য আবেদন করতে পারেন। ডিভি ভিসার আবেদন বিনামূল্যে করা যায়, তবে যারা লটারি বিজয়ী হন তাদের ভিসা গ্রহণের সময় একটি নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয়।
ডিভি লটারি আবেদন ২০২৪
গোটা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আমেরিকা। মানুষের সমস্ত মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সেখানে সবচেয়ে উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে। জীবনযাত্রার মান, কর্মসংস্থান, এবং অবকাঠামো আমেরিকাকে বিশ্বে একটি বিশেষ মর্যাদায় নিয়ে গেছে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখে। আমেরিকার সরকারও চান পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে এসে বসবাস করুক এবং আমেরিকাকে আরও উন্নত করে তুলুক। তাই আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ভিসার ব্যবস্থা করে থাকে। ডিভি বা ডাইভারসিটি ভিসা তার মধ্যে একটি।
যদি আপনি একটি যোগ্য দেশের নাগরিক হন এবং সকল নিয়মাবলী মেনে চলেন, তাহলে আপনি ডিভি লটারির জন্য আবেদন করতে পারবেন। ডিভি লটারির আবেদন অনলাইনে করতে হবে তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
ডিভি আবেদনের নির্দেশনা ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় দেওয়া থাকে, যার মধ্যে বাংলা ভাষাও অন্তর্ভুক্ত। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি—ডিভি লটারির আবেদন প্রক্রিয়া শুরুতে সম্পন্ন করাই সবচেয়ে ভালো। কারণ, শেষের দিকে আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে চাপও বেশি থাকে, যা কারিগরি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চলুন জেনে নেই কিভাবে আবেদন করতে হয়-
ডিভি লটারি আবেদন করার নিয়ম
ডিভি লটারির জন্য আবেদন করতে হলে তাদের ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং নির্ধারিত আবেদনের ফর্মটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পূরণ করতে হবে। কোনো ধরনের ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া যাবে না।
আমেরিকা ডিভি লটারি ২০২৪ আবেদন ফর্ম:
১। আবেদনকারীর সম্পূর্ণ নাম
২। জন্মের তারিখ
৩। জন্মের স্থান (আবেদনকারী যে শহর বা জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন অথবা যেখান থেকে জন্মনিবন্ধন কার্ড তৈরি করা হয়েছে)
৪। জাতীয়তা/দেশ
৫। আবেদনকারীর সাম্প্রতিক ছবি
৬। বর্তমান ঠিকানা/পূর্ণ ঠিকানা
৭। বর্তমানে যে দেশের বাসিন্দা
৮। ফোন নম্বর/মোবাইল নম্বর
৯। ই-মেইল ঠিকানা (যদি থাকে)
১০। সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রতিষ্ঠান
১১। বৈবাহিক অবস্থা (বিবাহিত/অবিবাহিত)
১২। সন্তানের সংখ্যা (যদি সন্তানের বয়স ২১ বছরের নিচে হয়)
১৩। স্বামী বা স্ত্রীর তথ্য
১৪। সন্তানদের তথ্য
সতর্কতা: একজন প্রার্থী কখনোই একটির বেশি আবেদন করবেন না। তবে স্বামী-স্ত্রী আলাদা আলাদা দুটি আবেদন করতে পারবেন। আবেদন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে একটি "কনফার্মেশন নম্বর" আসবে, যেখানে আবেদনকারীর পুরো নাম এবং জন্মসাল দেখানো হবে। ডিভি লটারির পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য এই তথ্যগুলো খুবই জরুরি। অনলাইনে ভিসা পাওয়ার সময় বা স্ট্যাটাস জানার জন্যও এই তথ্যগুলো প্রয়োজন হবে, তাই এগুলো সযত্নে সংরক্ষণ করবেন।
বাংলাদেশ ডিভি লটারি ২০২৪ আবেদন
দুর্ভাগ্যবশত, ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ আর আমেরিকান ডিভি লটারির জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারছে না। অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি লোক ইউএসএ ডিভি লটারির মাধ্যমে স্থায়ী হয়েছেন। অধিক সংখ্যক অভিবাসীর কারণে আপাতত বাংলাদেশ থেকে ডিভি লটারি গ্রহণ বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ সহ কোন কোন দেশ ডিভি ভিসা পাবে না:
যেসব দেশ থেকে অনেক বেশি অভিবাসী আমেরিকাতে বসবাস করছে, সেসব দেশগুলোকে গ্রিন কার্ড লটারি প্রোগ্রাম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৪ সালে এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এর কারণ হল, এক দেশের বিপুল পরিমাণ মানুষ আমেরিকাতে একসাথে থাকলে তারা এক সময়ে একত্রিত হয়ে, আমেরিকার রাষ্ট্র বা সরকারের বিরোধিতা করে কোন কাজ বা প্রতিবাদ শুরু করতে পারে। এতে আমেরিকার সার্বিক ক্ষতি হতে পারে। প্রতিটি দেশ থেকে ৫০,০০০ গ্রিন কার্ডের একটি সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব দেশ এই ভিসা সীমা অতিক্রম করেছে তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দেশের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৫৫,০০০ ভিসা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সহ যে সব দেশ ডিভি ভিসা লটারির জন্য আবেদন করতে পারছে না:
১. বাংলাদেশ ২. চীন (হংকং এসএআর সহ) ৩. কানাডা ৪. হন্ডুরাস ৫. কলম্বিয়া ৬. ব্রাজিল ৭. এল সালভাদোর ৮. জামাইকা ৯. হাইতি ১০. গুয়াতেমালা ১১. ভারত ১২. নাইজেরিয়া ১৩. মেক্সিকো ১৪. ফিলিপাইন ১৫. পাকিস্তান ১৬. যুক্তরাজ্য (উত্তর আয়ারল্যান্ড বাদে) ১৭. দক্ষিণ কোরিয়া ১৮. ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ১৯. ভিয়েতনাম
আমেরিকায় গেলে পৃথিবীর সব দেশের মানুষদের দেখা যাবে। জাতিগত বৈচিত্র্যের এক মিলনমেলা এই দেশ। উন্নত ও স্বচ্ছল জীবনযাপনের জন্য বিশ্বব্যাপী মানুষ আমেরিকার দিকে ছুটছে। আর এই পথচলা সহজ করেছে ডিভি লটারি প্রোগ্রাম।
ডিভি আবেদন ২০২৪ অর্থ বছর:
ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি ২০২৪ এর আবেদন শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। এই আবেদন ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বরাতে সংবাদমাধ্যম নিউজওয়্যার জানিয়েছে, ২০২৪ অর্থবছরে মোট ৫৫ হাজার গ্রিন কার্ড বিদেশি নাগরিকদের দেয়া হবে। ডিভি লটারির আওতায় যেসব দেশের নাগরিক আবেদন করতে পারবে না তা হলো: বাংলাদেশ, কানাডা, চীন, ব্রাজিল, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, এল সালভাদর, হাইতি, জামাইকা, ভারত, হন্ডুরাস, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য (উত্তর আয়ারল্যান্ড ছাড়া), ভেনেজুয়েলা, নাইজেরিয়া ও ভিয়েতনাম।
আমাদের আজকের লেখায় আমরা ডিভি লটারি ২০২৪ আবেদন, নিয়মাবলী ও যাবতীয় সব তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ আবারও ডিভি লটারি আবেদন করতে পারবে। এবং আমাদের দেয়া এই তথ্যগুলো আপনার জন্য কল্যাণকর হবে।
আবেদন করতে এখানে প্রবেশ করুন
0 Comments