//

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন ও প্রাপ্তির সহজ উপায়-২০২৪

ঘরে বসে অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করুন খুব সহজে: বিআরটিএ বাতায়নে আবেদন প্রক্রিয়া

সড়কে যেকোনো ধরনের মোটরযান চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অনুমতিপত্র থাকা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি সর্বসাধারণের ব্যবহৃত রাস্তা বা সড়কে মোটরযান চালাতে পারবেন না। তাই গাড়ি চালানোর জন্য বৈধতার ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কর্তৃক ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এটি শুধু মোটরযান চালানোর স্বীকৃতিপত্রই নয়, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কার্যকলাপে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রেও এটি একটি অপরিহার্য নথি। তবে, এখন আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। এখানে আপনি বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড এর জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন।

অনলাইনে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স: আবেদন ও প্রাপ্তির সম্পূর্ণ গাইড

  1. বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন: প্রথমে বিআরটিএ’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা হলো www.brta.gov.bd। এখানে ‘অনলাইন সেবা’ বা ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ বিভাগের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

  2. নিবন্ধন করুন: যদি আপনি নতুন ব্যবহারকারী হন, তবে আপনাকে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করতে হলে আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং অন্যান্য প্রাথমিক তথ্য প্রদান করতে হবে।

  3. অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করুন: নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করুন। এখানে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরন (যেমন, গাড়ি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি).

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া

বিআরটিএ এর তথ্য মতে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা:

বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একটি নাগরিককে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে। এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম বয়স এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হলো:

  • অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য: আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।

  • পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য: আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ২০ বছর হতে হবে।

  • আবেদনকারীকে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম এসএসসি পাশ দেখাতে হয়।

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স:

যেকোনো ধরনের মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রথম ধাপ হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ। বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই ধরনের হয়ে থাকে: অপেশাদার ও পেশাদার।

অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য: কোনো প্রকারভেদ নেই।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য: ৩টি ধরন রয়েছে, যা যানবাহনের ওজনের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়:

  1. হালকা মোটরযানের (ওজন ২৫০০ কেজির নিচে): প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২০ বছর।

  2. মধ্যম মোটরযানের (ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি): প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর এবং কমপক্ষে ৩ বছর ব্যবহৃত হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

  3. ভারী মোটরযানের (ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি): প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৬ বছর এবং কমপক্ষে ৩ বছরের মধ্যম মোটরযানের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পূর্বে আপনাকে প্রথমে লার্নার কার্ড সংগ্রহ করতে হবে এবং ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। বিআরটিএ অনুমোদিত ও মানসম্মত ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের কাগজপত্র:

  1. প্রার্থীর ছবি: ৩০০ x ৩০০ পিক্সেল সাইজের সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোবাইট।

  2. জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অথবা পাসপোর্ট: অনূর্ধ্ব ৬০০ কিলোবাইট।

  3. বর্তমান ঠিকানার গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির বিল: সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোবাইট।

  4. মেডিকেল সার্টিফিকেট: রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সইসহ পূরণকৃত স্ক্যান কপি (অনুর্ধ্ব ৬০০ কিলোবাইট)। [মেডিকেল সার্টিফিকেট ফরম ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন]

বিআরটিএ সেবা বাতায়ন-এ আবেদন প্রক্রিয়া:

১. বিআরটিএ সেবা বাতায়নে যান: প্রথমেই বিআরটিএ সেবা বাতায়নে গিয়ে এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। [সেবা বাতায়নের ওয়েবসাইট লিংক]

২. আবেদন ফর্ম পূরণ করুন: এনআইডি’র অনুরূপ তথ্য দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন। আবেদনকারীর পরীক্ষার স্থান নির্বাচন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারিত হবে।

৩. ফি প্রদান করুন: লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের শেষ ধাপে ফি জমা দেওয়ার পর, এটি তৈরি হয়ে যাবে। আবেদন ফি হলো:

  • ক্যাটাগরি-১ (শুধু গাড়ি): ৫১৮ টাকা।

  • ক্যাটাগরি-২ (গাড়ি ও মোটরসাইকেল): ৭৪৮ টাকা।

৪. ড্রাইভিং টেস্টের প্রবেশপত্র: ফি জমা দেওয়ার পর, এটি ড্রাইভিং টেস্টের প্রবেশপত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা বা টেস্ট সমূহ

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য একজন প্রার্থী বা আবেদনকারীকে তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়: লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্ট। যদি আবেদনকারী মানসম্মত ড্রাইভিং স্কুল অথবা দক্ষ প্রশিক্ষণকের তত্ত্বাবধানে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, তবে এ পরীক্ষাগুলো তার জন্য সহজতর হবে।

বর্তমানে ড্রাইভিং টেস্টের দিনেই প্রার্থী/গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

পরীক্ষাগুলোর বিস্তারিত:

  1. লিখিত পরীক্ষা: এটি সাধারণত ট্রাফিক আইন, সড়ক নিরাপত্তা, এবং গাড়ির মৌলিক কাজের ধারণা সম্পর্কে প্রশ্নাবলীর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

  2. মৌখিক পরীক্ষা: মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর সড়ক পরিবহন সম্পর্কিত মৌলিক জ্ঞান এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়।

  3. ফিল্ড টেস্ট: এটি আসল গাড়ি চালানোর পরীক্ষা, যেখানে প্রার্থীর বাস্তব চালনার দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন:

লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আপনাকে পুনরায় অনলাইনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি:

  • পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স (৫ বছরের নবায়ন সহ): ২,৪৮৭ টাকা।

  • অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স (১০ বছরের নবায়ন সহ): ৪,২১২ টাকা।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের জন্য একটি ডোপ টেস্ট সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

ডোপ টেস্ট সার্টিফিকেট কিভাবে পাবেন?

  1. ফরম সংগ্রহ: শিক্ষানবিশ লাইসেন্স বা এনআইডি কার্ডের ফটোকপি সহ বিআরটিএ যেকোন সার্কেল অফিস থেকে ডোপ টেস্টের ফরম ও স্মারক সংগ্রহ করতে হবে।

  2. ডোপ টেস্ট করানো: ফর্মটি সহ বিআরটিএ নির্ধারিত যেকোনো হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্ট করানো যাবে। হাসপাতাল ভেদে ডোপ টেস্ট ফি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রাপ্তি:

সকল পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর, আপনাকে আপনার বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে স্মার্টকার্ডের জন্য ফি জমা দিতে হবে। ফি জমা দেওয়ার পর ১ থেকে ৭ দিনের মধ্যে আপনি ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাবেন, যা দিয়ে আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন। স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট হলে এটি আপনার ঠিকানায় ডাকযোগে প্রেরণ করা হবে। আবেদনের সময় নির্ধারিত ডেলিভারি ফি প্রদান করতে হবে।

বর্তমানে বিআরটিএ থেকে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে। তাই ড্রাইভিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দালালের শরণাপন্ন হওয়া অমূলক।


About jsr reviews

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments:

Post a Comment